ইরান : চাপে থেকেও এগিয়ে চলা

- Update : 09:38:39 pm, Saturday, 13 September 2025 6 Views

ইরান সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে চায়। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে নতুন সমঝোতা এই অবস্থানকেই প্রমাণ করে। কিছু স্থাপনায় ইতিমধ্যে পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তার কারণে ইরান সব সাইটে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। তবুও আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। ইরান মনে করে, বিদেশি চাপ নয়—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
২০২২ সালে মাহসা আমিনিকে ঘিরে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার জেরে কিছু অস্থিরতা তৈরি হয়। সরকার মনে করে, বাইরের শক্তি দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে এবং জনগণের ক্ষোভকে উসকে দিচ্ছে। তবুও সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ইরান সবসময় বলে এসেছে—দেশের ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জাতীয় নিরাপত্তার অংশ।
পশ্চিমা দেশগুলো পুরোনো নিষেধাজ্ঞা পুনরায় চালু করতে চাইছে। ইরান মনে করে, এটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে হাঁটেনি। বরং শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যই তার পারমাণবিক কর্মসূচি। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে—তবুও ইরান স্বনির্ভর হতে চেষ্টা করছে। কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তিতে দেশটি ধীরে ধীরে বিকল্প পথ খুঁজে নিচ্ছে।
অবশ্যই ইরান অর্থনৈতিক চাপে আছে। কিন্তু এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক অবরোধ। তবুও দেশটি নিজের ভেতরে উৎপাদন বাড়াচ্ছে, নতুন বাজার খুঁজছে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করছে। অনেক ইরানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুললে বাইরের চাপ দীর্ঘমেয়াদে ইরানকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
দেশের ভেতরে সংস্কারের দাবি উঠলেও ইরান সরকার বলছে, সংস্কার নিজের গতিতেই হবে। বাইরের চাপ বা ষড়যন্ত্র নয়—দেশের বাস্তবতা ও জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েই তারা অগ্রসর হতে চায়। সংস্কার মানে রাষ্ট্রের ভিত্তি নড়বড়ে করা নয়; বরং নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইসলামী মূল্যবোধ ধরে রেখে আধুনিকায়ন করা।
সব মিলিয়ে ইরান আজ এক দ্বন্দ্বের মধ্যে—একদিকে বাইরের চাপ ও নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ভেতরের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু দেশটি দৃঢ়ভাবে টিকে আছে। সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ইরান নিজের পথেই এগিয়ে যাবে। আত্মনির্ভরতা, উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্বই হবে ইরানের ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি।