বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা: সংকট, সম্ভাবনা আর টিকে থাকার লড়াই

- Update : 12:04:48 am, Thursday, 3 July 2025 3 Views

ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি কঠিন ও পরিবর্তনশীল সময় পার করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক বাজারের চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা—সব মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকা কিছুটা ধীরগতিতে চললেও এখনো থেমে যায়নি।
চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় ৩.৯ শতাংশের ঘরে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে এটি কোনো অর্থনৈতিক ধস নয়। কৃষি, নির্মাণ ও পোশাক রপ্তানির মতো খাতগুলো এখনো অর্থনীতিকে সচল রাখছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহে এসেছে স্বস্তির খবর। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলে যেসব অর্থ পাঠাচ্ছেন, তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় অবদান রাখছে। এপ্রিল ও মে মাসে প্রবাসী আয়ে এসেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে।
রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে, আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব কারখানা ও নতুন বাজারে প্রবেশের ফলে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জুন মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি হালকা প্রকৌশল, ওষুধ শিল্প এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
তবে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। চাল, ডাল, তেল, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। জুন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯.২ শতাংশ, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক সহায়তা কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হচ্ছে। সরকারও বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ভর্তুকি ও রপ্তানি খাতে প্রণোদনা বৃদ্ধি করেছে।
তবে এই সমস্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি, প্রশাসনিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত, টেকসই পরিকল্পনা এবং দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সংকট থাকলেও সম্ভাবনার অভাব নেই। এই মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে আরও মজবুত, আরও আত্মনির্ভর।