নাটোরের ঐতিহ্য: দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী ও রানী ভবানীর গৌরবগাথা

- Update : 08:55:38 pm, Monday, 30 June 2025 36 Views

নাটোর—উত্তরবঙ্গের হৃদয়ে অবস্থিত এক ঐতিহ্যবাহী জেলা, যার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ী কেবল একটি স্থাপত্যকর্ম নয়, এটি বাংলার এক প্রভাবশালী নারী শাসকের নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার জীবন্ত স্মারক। রাজবাড়ীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলার ‘জনদরদী রানি’ রানী ভবানীর গৌরবময় ইতিহাস।
রানী ভবানী: নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজা রামকান্ত রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ভবানী সামলান রাজ্যের দায়িত্ব। নারী হয়েও তিনি প্রশাসন, রাজস্বনীতি ও দান-অনুদানে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও মন্দির-মসজিদ নির্মাণে তাঁর অবদান আজও স্মরণীয়।
নাটোরের ইতিহাসে রানী ভবানী শুধুই জমিদার নন, তিনি ছিলেন প্রজাদের অভিভাবক। রাজস্ব আদায়ে তিনি ন্যায়নীতি বজায় রাখতেন এবং প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে ছিলেন সদা প্রস্তুত।
দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী: স্থাপত্যের এক রাজকীয় সৌন্দর্য
রানী ভবানীর শাসনামল থেকেই দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পরবর্তীকালে এটি দিঘাপতিয়া রাজ পরিবারের আবাসস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে এই প্রাসাদ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ‘উত্তরা গণভবন’ নামে পরিচিত, যেখানে দেশের রাষ্ট্রপতি মাঝে মাঝে অবস্থান করে থাকেন।
রাজবাড়ীর স্থাপত্যে মুঘল ও ইউরোপীয় ধাঁচের অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। সুসজ্জিত বাগান, খিলানযুক্ত হলরুম, সুউচ্চ মিনার ও রাজসিক দরবার কক্ষ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিকতা
দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী এখন একটি সংরক্ষিত ঐতিহাসিক ভবন। এটি শুধু নাটোর নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ছুটে আসেন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের সাক্ষী হতে।
দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী আমাদের অতীত ঐতিহ্যের এক মহিমান্বিত নিদর্শন। আর রানী ভবানী, একজন নারী শাসক হিসেবে তাঁর কর্ম, কীর্তি ও দূরদর্শিতা আজও প্রেরণা দেয় সকলকে। নাটোরের এই ঐতিহাসিক রাজপ্রাসাদ আমাদের জাতীয় গৌরবের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে থাকবে চিরকাল।