Dhaka 9:49 pm, Sunday, 13 July 2025
News::
  • রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত ৯টা ৫৮ মিনিটের দিকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা, মিটফোর্ডে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের জালে এক নেতার উত্থান

Correspondent:
  • Update : 11:23:39 am, Saturday, 12 July 2025 2 Views

পুরান ঢাকায় এক তরুণ ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা যুবদল নেতা মঈনের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাজুড়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিলেন তিনি। নিহত ব্যবসায়ী সোহাগ সেই চাঁদাবাজির বলি হয়েছেন বলে দাবি উঠেছে।

নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন জানান, “গত দুই-তিন মাস ধরে যুবদল নেতা মঈন প্রতি মাসেই সোহাগের দোকানে এসে চাঁদা চাইতেন। কিন্তু সোহাগ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, সে কোনো চাঁদা দেবে না। এরপর থেকেই মঈনের হুমকি-ধমকি বাড়তে থাকে। একবার দোকানের সামনেই এসে বলেছিল, ‘তোর খবর আছে, দেখে নেব।’”

চকবাজার এলাকায় নিজের দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোহাগ। ঠিক তখনই মঈনসহ আরও ৪-৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার পথরোধ করে। পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। হামলার সময় সোহাগের শরীর থেকে পোশাকও খুলে নেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। অত্যাচারের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, আতঙ্কে কেউই কাছে এগিয়ে যেতে সাহস পাননি। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন মুখে রুমাল বেঁধে ছিল। তবে মঈনের উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান।

স্থানীয় রাজনীতিতে এক সময়ের নিভৃতচরিত্র মঈন বর্তমানে চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা ও আশপাশের ফুটপাত এবং কেমিক্যাল মার্কেট তার নিয়ন্ত্রণে। অসংখ্য দোকানদার ও হকারের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে আসছে তার বাহিনী। এমনকি মিটফোর্ড হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ব্যবসায়ী সোহাগ ছিলেন এমন একজন সাহসী ব্যক্তি, যিনি এই অবৈধ দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও প্রাণ দিতে হলো।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, “এটা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সোহাগকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, যাতে কেউ আর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মুখ না খোলে।”

তারা আরও বলেন, “যদি এই হত্যার বিচার না হয়, তবে আমরা কেউই আর নিরাপদ নই। মঈন ও তার বাহিনীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে মঈনের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে। চকবাজার থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ যাচাই করা হচ্ছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতির রাজনীতির বলি হয়েছেন একজন তরুণ ব্যবসায়ী। তার পরিবার আজ শোকে স্তব্ধ, এলাকাবাসী আতঙ্কিত। এই হত্যা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

সোহাগের পরিবার ও এলাকাবাসীর একটাই দাবি— দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

Share This News

Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save your email and other information.

Uploader information
Tags :
UPDATE :

চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা, মিটফোর্ডে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের জালে এক নেতার উত্থান

Update : 11:23:39 am, Saturday, 12 July 2025

পুরান ঢাকায় এক তরুণ ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা যুবদল নেতা মঈনের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাজুড়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিলেন তিনি। নিহত ব্যবসায়ী সোহাগ সেই চাঁদাবাজির বলি হয়েছেন বলে দাবি উঠেছে।

নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন জানান, “গত দুই-তিন মাস ধরে যুবদল নেতা মঈন প্রতি মাসেই সোহাগের দোকানে এসে চাঁদা চাইতেন। কিন্তু সোহাগ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, সে কোনো চাঁদা দেবে না। এরপর থেকেই মঈনের হুমকি-ধমকি বাড়তে থাকে। একবার দোকানের সামনেই এসে বলেছিল, ‘তোর খবর আছে, দেখে নেব।’”

চকবাজার এলাকায় নিজের দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোহাগ। ঠিক তখনই মঈনসহ আরও ৪-৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার পথরোধ করে। পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। হামলার সময় সোহাগের শরীর থেকে পোশাকও খুলে নেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। অত্যাচারের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, আতঙ্কে কেউই কাছে এগিয়ে যেতে সাহস পাননি। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন মুখে রুমাল বেঁধে ছিল। তবে মঈনের উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান।

স্থানীয় রাজনীতিতে এক সময়ের নিভৃতচরিত্র মঈন বর্তমানে চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা ও আশপাশের ফুটপাত এবং কেমিক্যাল মার্কেট তার নিয়ন্ত্রণে। অসংখ্য দোকানদার ও হকারের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে আসছে তার বাহিনী। এমনকি মিটফোর্ড হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ব্যবসায়ী সোহাগ ছিলেন এমন একজন সাহসী ব্যক্তি, যিনি এই অবৈধ দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও প্রাণ দিতে হলো।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, “এটা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সোহাগকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, যাতে কেউ আর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মুখ না খোলে।”

তারা আরও বলেন, “যদি এই হত্যার বিচার না হয়, তবে আমরা কেউই আর নিরাপদ নই। মঈন ও তার বাহিনীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে মঈনের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে। চকবাজার থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ যাচাই করা হচ্ছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতির রাজনীতির বলি হয়েছেন একজন তরুণ ব্যবসায়ী। তার পরিবার আজ শোকে স্তব্ধ, এলাকাবাসী আতঙ্কিত। এই হত্যা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

সোহাগের পরিবার ও এলাকাবাসীর একটাই দাবি— দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।