Dhaka 11:57 am, Tuesday, 8 July 2025
Notice::
  • আমাদের সাথেই থাকুন।।।   আপনার বিজ্ঞাপন দিন
Breaking News ::

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ঝরে গেল ৫ মেডিকেল শিক্ষার্থীর প্রাণ

Correspondent:
  • Update : 08:16:27 pm, Thursday, 12 June 2025 15 Views

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী AI171 ফ্লাইটটি উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহরের মেঘানিনগর এলাকার একটি মেডিকেল হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়। ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এয়ার ইন্ডিয়ার AI171 ফ্লাইট, গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডন। ফ্লাইটটিতে ছিলেন ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য।

উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই বিমানটি নিচে পড়ে যায়।

বিমানটি সরাসরি বিধ্বস্ত হয় আহমেদাবাদের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর, যেখানে ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আরও অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ও বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতিক দর্শনা ভাঘেলা বিবিসিকে বলেন, “যখন উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়, আমি অফিসে ছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে যাই। বহু চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

আহত এক শিক্ষার্থীর মা জানান, তাঁর ছেলে জীবন বাঁচাতে দুই তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে। “ও বলল, হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘর কাঁপতে থাকে। জানালার কাচ ভেঙে যায়, তখনই সে ঝাঁপ দেয়,” বলেন তিনি।

উদ্ধারকারীদের মতে, হোস্টেলের ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে আটকে থাকতে পারেন। চলছে উদ্ধার অভিযান।

এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমাদের AI171 ফ্লাইটটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আমরা যাত্রীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছি।”

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লাইটের উড্ডয়নের এত দ্রুত সময়ের মধ্যেই যদি ত্রুটি দেখা দেয়, তবে তা যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা কিংবা টেকনিক্যাল মিস-কনফিগারেশন হতে পারে।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (DGCA) ও বোয়িং-এর বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এই দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং নগর পরিকল্পনার গুরুতর ত্রুটিও সামনে এনেছে। বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে এমন জনবহুল এবং সংবেদনশীল স্থাপনা থাকলে, তা কোনোভাবে নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হোস্টেল এমনভাবে অবস্থিত ছিল যে, বিমান চলাচলের সরাসরি পথের কাছেই ছিল এটি। এ বিষয়ে শহরের সিভিক প্ল্যানিং নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশজুড়ে চিকিৎসক সম্প্রদায়, ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বিবৃতিতে বলেন, “এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। সরকার প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবে।”

এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে ফের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তির উন্নয়ন যতই হোক, নিরাপত্তা ও মানবিক দিক সবসময় অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। পাঁচ তরুণ মেডিকেল শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু একটি অপূরণীয় ক্ষতি। একইসঙ্গে এটি একটি কঠিন শিক্ষা—যেখানে প্রযুক্তি, প্রশাসন ও পরিকল্পনার সমন্বয় ব্যর্থ হলে জীবন কীভাবে মুহূর্তেই থেমে যেতে পারে।

Share This News

Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save your email and other information.

Uploader information
Tags :
UPDATE :

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ঝরে গেল ৫ মেডিকেল শিক্ষার্থীর প্রাণ

Update : 08:16:27 pm, Thursday, 12 June 2025

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী AI171 ফ্লাইটটি উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহরের মেঘানিনগর এলাকার একটি মেডিকেল হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়। ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এয়ার ইন্ডিয়ার AI171 ফ্লাইট, গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডন। ফ্লাইটটিতে ছিলেন ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য।

উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই বিমানটি নিচে পড়ে যায়।

বিমানটি সরাসরি বিধ্বস্ত হয় আহমেদাবাদের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর, যেখানে ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আরও অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ও বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতিক দর্শনা ভাঘেলা বিবিসিকে বলেন, “যখন উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়, আমি অফিসে ছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে যাই। বহু চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

আহত এক শিক্ষার্থীর মা জানান, তাঁর ছেলে জীবন বাঁচাতে দুই তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে। “ও বলল, হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘর কাঁপতে থাকে। জানালার কাচ ভেঙে যায়, তখনই সে ঝাঁপ দেয়,” বলেন তিনি।

উদ্ধারকারীদের মতে, হোস্টেলের ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে আটকে থাকতে পারেন। চলছে উদ্ধার অভিযান।

এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমাদের AI171 ফ্লাইটটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আমরা যাত্রীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছি।”

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লাইটের উড্ডয়নের এত দ্রুত সময়ের মধ্যেই যদি ত্রুটি দেখা দেয়, তবে তা যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা কিংবা টেকনিক্যাল মিস-কনফিগারেশন হতে পারে।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (DGCA) ও বোয়িং-এর বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এই দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং নগর পরিকল্পনার গুরুতর ত্রুটিও সামনে এনেছে। বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে এমন জনবহুল এবং সংবেদনশীল স্থাপনা থাকলে, তা কোনোভাবে নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হোস্টেল এমনভাবে অবস্থিত ছিল যে, বিমান চলাচলের সরাসরি পথের কাছেই ছিল এটি। এ বিষয়ে শহরের সিভিক প্ল্যানিং নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশজুড়ে চিকিৎসক সম্প্রদায়, ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বিবৃতিতে বলেন, “এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। সরকার প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবে।”

এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে ফের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তির উন্নয়ন যতই হোক, নিরাপত্তা ও মানবিক দিক সবসময় অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। পাঁচ তরুণ মেডিকেল শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু একটি অপূরণীয় ক্ষতি। একইসঙ্গে এটি একটি কঠিন শিক্ষা—যেখানে প্রযুক্তি, প্রশাসন ও পরিকল্পনার সমন্বয় ব্যর্থ হলে জীবন কীভাবে মুহূর্তেই থেমে যেতে পারে।