বুধবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের স্বাক্ষরিত কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রাজ দরবারে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সৌদি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান, লাল গালিচা এবং রাজকীয় প্রটোকলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রায় আট দশকের পুরোনো এই মিত্রতার ইতিহাসে এটিকে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
গত দু'বছর ধরে ইসরায়েলের আগ্রাসন, বিশেষ করে গাজায় যুদ্ধ এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে হামলা, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বেড়েছে। একই সময়ে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাও বেড়েছে। সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাত দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।
এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের ‘যৌথ অঙ্গীকার’কে তুলে ধরে। এটি যেকোনও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘যৌথ প্রতিরোধ ক্ষমতা’ বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনও দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হলে তা উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “আমরা এই চুক্তির বিষয়ে অবগত। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর নজর রাখছি।”
এই চুক্তি পাকিস্তানের আপেক্ষিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে, তবে একই সঙ্গে দুই দেশকেই একে অপরের আঞ্চলিক উত্তেজনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাকিস্তান এখন সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। একইভাবে, সৌদি আরবও পাকিস্তানের বিরোধে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে, জড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এর আগে ১৯৫১ সালে দুই দেশ একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা কয়েক দশক ধরে কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে। এরপর থেকে বহুবার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সৌদি আরবে দায়িত্ব পালন করেছে এবং সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৬৭ সাল থেকে পাকিস্তান ৮ হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
তাই মধ্যপ্রাচ্য এখন নতুন করে আলোচনায়। দেখা যাবে এ চুক্তির ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড কেমন হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ হারিজ ইসলাম স্বাধীন
Design & Development By HosterCube Ltd.