বিশ্ব রাজনীতিতে যখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে, তখন একজন নেতা নির্লিপ্ত থেকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইরানের ঘাঁটিতে বিস্ফোরণের পর মধ্যপ্রাচ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন পুতিন তার চিরাচরিত কৌশলে নীরবে ও দৃঢ়ভাবে জবাব দিয়েছেন। এ হামলার নেপথ্যে কারা, তা তিনি সরাসরি বলেননি, তবে প্রতিক্রিয়ায় এমন বার্তা দিয়েছেন যাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো স্পষ্টভাবে বুঝে নেয়।
রাশিয়া সবসময়ই ইরানের একজন নির্ভরযোগ্য মিত্র। আর পুতিন এমন এক নেতা, যাঁর চিন্তা শুরু হয় শত্রুর শেষ পরিকল্পনা থেকে। তিনি প্রতিক্রিয়া দেখান না, তিনি গঠন করেন প্রতিকৌশল। সামরিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক—এই তিনটি স্তরে একসঙ্গে কাজ করে রাশিয়ার নেতৃত্ব আজকের এই অবস্থানে এসেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় রাশিয়ার অবস্থান অনেকের কাছে অস্পষ্ট মনে হলেও, অন্তরালে পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া যে কৌশলগত ভূমিকা রাখছে, তা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি বিমানঘাঁটিতে হামলার পাল্টা জবাবে রাশিয়া হয়তো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি, তবে সময়মতো “মিত্রের পাশে থাকার দায়িত্ব” কীভাবে পালন করতে হয়, তা তারা আবারও প্রমাণ করেছে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে—পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা, উন্নয়নশীল বা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। 'রেজিম চেঞ্জ' বা সরকার পতনের এই নীতি নতুন নয়—আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া সহ বহু দেশে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়েও পুতিন দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশকে সতর্ক করেছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তিনি ৫ আগস্টের আগেই সতর্ক করেছিলেন পশ্চিমা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে। রাশিয়া বরাবরই বাংলাদেশকে একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখে, যার শিকড় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রসারিত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়। যখন আমেরিকার সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেয়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাতটি যুদ্ধজাহাজ তাদের প্রতিহত করে। সেই ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব আজও বাংলাদেশের জাতিস্মৃতিতে উজ্জ্বল, এবং বর্তমান ভূ-রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থান সেই পুরনো দায়বদ্ধতারই নতুন প্রকাশ।
বিশ্ব যখন যুদ্ধ, সংঘাত ও অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঘেরা, তখন পুতিন হয়ে উঠেছেন সেই নেতা, যিনি মিত্রকে আগেই সতর্ক করেন, শত্রুকে নীরবে জবাব দেন এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে নিজের ভূমিকা রেখে চলেছেন। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা হোক বা দক্ষিণ এশিয়ায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপ—পুতিন বারবার প্রমাণ করছেন, শীতল মাথার পরিকল্পনাতেই লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ হারিজ ইসলাম স্বাধীন
Design & Development By HosterCube Ltd.