গাজা উপত্যকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত ও ইসরায়েলি অবরোধের কারণে প্রায় ২৩ লাখ গাজার বাসিন্দা চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইসরায়েলি হামলা ও স্থল অবরোধের ফলে খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ৬৪,৭১৮ জন নিহত ও ১,৬৩,৮৫৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সাবেক ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস প্রধান হারজি হালেভি জানান, মোট ২,০০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৯০% জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করছে ২৫০,০০০ মানুষ গাজা সিটি ছেড়েছে, কিন্তু বাস্তবে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষই কেবল গত মাসে স্থানান্তরিত হয়েছে। অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয় না পাওয়ায় রাস্তার উপরে এবং স্কুল ও মার্কেটে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে।
খাদ্য সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, প্রায় ৪৭০,০০০ মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খাদ্য অভাবের কারণে ৩৬১ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, যার মধ্যে ১৩১ জন শিশু।
চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসক ও রোগীরা অনাহারে ভুগছেন। আল-আওদা হাসপাতালের চিকিৎসক রামি আল শায়া জানিয়েছেন, ৪০০-এর বেশি অস্ত্রোপচার স্থগিত করা হয়েছে, যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক সেনেটররা অভিযোগ করেছেন যে, ইসরায়েল গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছে। তারা উল্লেখ করেছেন, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও মানবিক সহায়তা সীমিত করার ফলে ফিলিস্তিনিরা তাড়িত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ‘অনৈতিক’।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, গাজার বাসিন্দাদের বাঁচাতে এবং মানবিক সংকট নিরসনে একতাবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবিক সাহায্যকারীদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে।
গাজার বাসিন্দাদের জন্য সবার সহানুভূতি ও কার্যকর সমর্থন আজ বিশেষভাবে প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ও মানবিক নিরাপত্তা ফিরে পেতে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ হারিজ ইসলাম স্বাধীন
Design & Development By HosterCube Ltd.