অস্তিত্বসংকটে প্রকৃতির ভান্ডার টাঙ্গুয়ার হাওর
বাংলাদেশে পরিবেশ নষ্ট করার মতো কর্মকাণ্ড বিনা বাধায় চলছে। নদী দূষণ ও দখল, নির্বিচারে কৃষিজমি ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প, পাহাড় কাটা, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার, উন্নয়নের নামে গাছ কাটা ইত্যাদি কারণে এদেশের পরিবেশ প্রকৃতি দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে। ঢাকায় এক সময় যে খালগুলো ছিল তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কিছু খালের নাম শোনা যায় কিন্তু সেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব খাল উদ্ধারে সরকার কোটি কোটি টাকার বাজেট করছে, খরচ করছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। খাল উদ্ধারের নামে শুধু অর্থের অপব্যয় ও চুরি হচ্ছে। ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশন খাল উদ্ধারের দায়িত্ব পেলেও তাতে কোন সুফল বয়ে আনতে পারে নাই।
এবার টাঙ্গুয়ার হাওরের দিকে একটু নজর দেয়া যাক। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় অবস্থিত এই হাওর। প্রকৃতির অনুপম এই সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধার এই হাওরটির যেন কোন অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে হাওরটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কমে আসছে মাছ ও জলজ প্রাণী। হাওরের অভয়াশ্রম ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে না পারলে মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। হাওর এলাকায় ৬০ হাজার লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই জলাশয়ের ওপর। পর্যটকদের প্রিয় জায়গা হওয়াতে এখানে প্রতিদিন শতাধিক নৌকা নিয়ে হাওরজুড়ে ভেসে বেড়ান। এসব পর্যটকরা বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্যের খালি প্যাকেট ও পলিথিন হাওরে ফেলছে। নৌকায় উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছে। এর ফলে হাওর এলাকায় পাখির বসবাস বিপদজনক হচ্ছে। পর্যটকরা শখের বসে পাখিও শিকার করছে। এক সময় যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলত বর্তমানে তা আর দেখা যাচ্ছে না।
হাওরে এক সময় প্রচুর বন ছিল। বৈরী কর্মকাণ্ডের কারণে বন ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জ্বালানির জন্য বন ধ্বংস করছে। হাওরে কী পরিমাণ বন আছে তার কোন সঠিক তথ্য বন বিভাগে নেই। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন পর্যটক ও তাদের বহনকারী নৌযান অবাধ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ। হাওরে ফেলা পর্যটকদের বর্জ্যও পরিবেশের ক্ষতি করছে। ১৯৯৯ সনে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ বলে ঘোষণা করে সরকার। এর পরও স্থানীয়রা যেমন খুশি তেমন করে মাছ ধরছেন, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করছেন। এগুলো দেখভাল করার জন্য যেন কেউ নেই। ফলে হাওরটি এখন অস্তিত্বসংকটে ধুঁকছে। শূন্য হয়ে যাবে প্রকৃতির ভান্ডার।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ হারিজ ইসলাম স্বাধীন
Design & Development By HosterCube Ltd.